বাবু সিদ্ধান্ত ( বর্ধমান ) : শিক্ষক দিবসে এ বছর রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পেতে চলেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার তিনজন শিক্ষক। জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, “যে তিন শিক্ষক ‘শিক্ষারত্ন’ পুর্কার পাচ্ছেন তারা হলেন কালনা মহারাজা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ,কেতুগ্রাম ১ ব্লকের আরগন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পৃথ্বীরাজ সিংহ ও রায়নার মুসলিম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসহায় মুখোপাধ্যায়। শিক্ষা দফতর থেকে এই খবর জানানো হয়েছে।“
কালনা মহারাজা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষের বাড়ি কালনার বড়মিত্র পাড়ায় । ৩২ বছর ধরে তিনি শিক্ষকতা করছেন। প্রথমে তিনি কালনার মেদগাছি হাইস্কুল ও পরে কালনার কৃষ্ণদেবপুর স্কুলে শিক্ষকতা করেন । ২০১১ সালের জুলাই মাসে শ্রীমন্ত বাবু মহারাজা হাইস্কুলে শিক্ষকতা কাজে যোগ দেন । ৯ বছর ধরে তিনি এই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । শ্রীমন্তবাবু বলেন ,“শিক্ষা দপ্তর থেকে ফোন করে তাঁকে জানানো হয়েছে ‘শিক্ষকরত্ন’ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছেন । তিনি বলেন ,এই পুরস্কার শুধুমাত্র আমার নয়। এই পুরস্কার স্কুলের সবার।“ শিক্ষা দফতর সূত্রে জানাগিয়েছে ,মহারাজা হাইস্কুল কে জেলার অন্যতম স্কুল হিসাবো গড়ে তোলার কাজে অনবদ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন শ্রীমন্ত ঘোষ । বিদ্যালয়ে ১৫ টি শ্রেণীকক্ষ তৈরি ছাড়াও বিগত কয়েক বছর যাবৎ মাধ্যমিকে ১০০ শতাংশ পাশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে মহারাজা হাইস্কুল । এছাড়াও প্রতিটি ক্লাসের নিজস্ব লাইব্রেরি রয়েছে বিদ্যালয়ে ।গরিব ছাত্রদের স্কুল ছুট হয়েযাওয়া আটকাতে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে ।পাশাপাশি পড়ুয়াদের সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য বিদ্যালয়ে দেওয়াল পত্রিকা’র উপর জোর দেওয়া হয়েছে । এইসব উল্লেখযোগ্য কাজের কৃতিত্ব স্বরুপ শ্রীমন্তবাবু শিক্ষকরত্ন পুরস্কার পেতে চলেছেন ।
শিক্ষকরত্ন পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হওয়া অপর শিক্ষক পৃথ্বীরাজ সিংহর বাড়ি বীরভূমের নানুরে । তিনি কেতুগ্রাম ১ ব্লকের তস্যগ্রাম আরগন প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন । ১৯৯৯ সালে তিনি প্রথম পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুর সংলগ্ন সিঙাপুর প্রাথমিক স্কুলে যোগ দেন। পরে ২০০৪ সালে তিনি আরগন স্কুলে চলে আসেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক হন।শিক্ষাদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে ,“২০১৪ সাল থেকে শিক্ষা দফতরের নির্মল বিদ্যালয় ও শিশুমিত্র পুরস্কার হাসিল করেছে এই বিদ্যালয়। এছাড়াও পড়াশোনা, শরীরচর্চার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা প্রচার চালানোর কাজে আরগন প্রাথমিক স্কুল অনবদ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে । লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকলেও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিলির পাশাপাশি করোনা ও ডেঙ্গি নিয়ে গ্রামবাসীদের সচেতনতা করার কাজেও আরগন প্রাথমিক বিদ্যালয় কাজ করে গিয়েছে । ”
অন্যদিকে স্কুল ছুট বন্ধকরে এলাকার সমস্ত ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলমুখী করে তোলার কাজে বিশেষ সফলতার নিরিখে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার পাচ্ছেন রায়না মুসলিম প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসহায় মুখোপাধ্যায় । তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের দানকরা জমিতেই বিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছিল । সেই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে তিনি দায়িত্ব সামলাচ্ছেন । রামসহায় বাবু বলেন ,শিশুশ্রম বন্ধ করে পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে প্রচার চালানো ছাড়াও সচেতনতা প্রচার চালানোর কাজেও তার বিদ্যালয় পিছিয়ে থাকেনি । স্কুলে রক্তদান শিবির করা ছাড়াও করোনা প্রতিরোধে মাস্ক বিলি করা হয়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষার উন্নতির জন্যে বিভিন্ন রাজ্যে আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছেন ।রামসহায় বাবুর দাবি এইসব কাজেরই স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ।